অক্টোবর ১৯, ২০২১
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে হুমকির মুখে সাতক্ষীরা
শেখ শাওন আহমেদ সোহাগ: জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বিশ্বজুড়ে। এর ফলে যেসব দেশ সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। আর এ দেশের উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের সম্মুখিন হতে হচ্ছে এ জেলার মানুষের। ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, লবণাক্ততা, অতিবৃষ্টি, জলাবন্ধতা,নদীভাঙন, নদীতে পানির জোয়ার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ অ লের জনগোষ্ঠিকে নানাভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর এসব দুর্যোগে শিশু ও নারীরা সবচাইতে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। প্রান্তিক এলাকার নারী ও শিশুরা বিভিন্ন রোগের কবলে পড়ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত দেশের একটি এবং এর উপকূলীয় অ ল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। জার্মান ওয়াচ গেøাবাল-এর জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিআরআই-২০১৭) অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ শীর্ষ দশের একটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকারী প্যানেল (আইপিসিসি) ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে তার ১৭ শতাংশ জমি এবং তার খাদ্য উৎপাদনের ৩০ শতাংশ ক্ষতি হারাতে চলেছে। গত কয়েক বছর যাবত একের পর এক বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাতক্ষীরার মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার ফলে এখানকার অর্থনীতি আজ হুমকির মুখে। নদী গর্ভে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি বিলিন হয়ে যাওয়ায় অনেকে নিজ জন্মস্থান ছেড়ে পাড়ি জমাচ্ছে অন্য জায়গায়। বর্তমানে জেলার মধ্যে সবচাইতে দূর অবস্থার মধ্যে রয়েছে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন। এই অ লে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ৫ টি পয়েন্ট দিয়ে নদীর জোয়ারের পানি বাঁধ ওভার ফ্লো হয়ে ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ১০ টি গ্রাম। কয়েক হাজার মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। জেলার কালিগঞ্জের উপকূলীয় মথুরেশপুর ইউনিয়নের হাড়দ্দহা গ্রামের আব্দুস সবুর, সজীব হোসেন, শের আলী, হাসানুর রহমান জানান, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে কালিন্দী নদীর বাঁধ ভেঙে যেয়ে তলিয়ে যায় তাদের বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ মৎস্যঘের। এর ফলে তারা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানান। শ্যামনগর উপজেলার চুনা এলাকার পারভীন আক্তার, জাকারিয়া, জবেদ আলী, আজিজুর রহমান, গাবুরা এলাকার মতিয়ার রহমান, ইশারাত আলী ও মনিরা পারভীন জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে যায়। ওই সময়ে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতো। প্রায় প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বিন্দু নারী উন্নয়ন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জান্নাতুল মাওয়া বলেন, সব ধরণের দুর্যোগেই নারী, কিশোরী, গর্ভবতী, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীরা অধিক ঝুঁকির সম্মুখিন হয়। ঘরহারা নারী ও কিশোরীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করে এবং যৌন হয়রানির স্বীকার হয়। বয়স্ক, গর্ভবতী এবং প্রতিবন্ধীদের চলাচলের সমস্যা দেখা যায়। তার পাশাপাশি সকলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। শিশুরা নানান ধরণের সংকটে পড়ে। নারী শিশুরা বাল্য বিবাহের শিকার হয়। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক হুমায়ুন করিব বলেন, এনিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর জোয়ার বৃদ্ধির ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি যাতে প্রবেশ না করে, সেজন্য বাঁধগুলো টেকসই করার চেষ্টা করছি। 8,627,347 total views, 6,897 views today |
|
|
|